বুনো হাসেঁর বাচ্চা

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০২:৪৬:৩১ || পরিবর্তিত: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০২:৪৬:৩১

বুনো হাসেঁর বাচ্চা

শীতকালের মাঝামাঝি চারিদিক নিরব,নিঝুম কোনোকিছুতেই কারো কোনো তাড়া নেই। দিনের শেষলগ্নে এসে হালকা একটু মিষ্টি রোদের ঝলকানি কার না ভালো লাগে। 

আর এসময় ডিঙ্গি নৌকায় কয়েকজন বন্ধু মিলে ভ্রমন করলে তার যেন তুলনায় হয় না।আর তাই আসর নামাজ শেষে নদীর তীরে ভেড়ানো জেলেদের ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বাইতে শুরু করলাম।

একজনের হাতে বৈঠা আরেকজনের হাতে দাঁড় আর তাতেই নৌকার সে কী তীব্র গতি যেন থামতেই চায় না। ভ্রমণ শুরু হল নদীর উত্তরে স্রোতের বিপরীতে। হালকা স্রোতে সিন্দাবাদের জাহাজের মত তরতর করে এগিয়ে চলেছে আমাদের নৌকা।

নদীর দুপাশ জুড়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। যেহেতু নৌকাটি অনেক ছোট তাই মাঝে মাঝেই তীব্র বেগে ঝাকুঁনি দিয়ে উঠছে। আর তখনি পড়ি মড়ি করে সবাই জড়িয়ে ধরছি নৌকায় লাগানো হাতল। একটু ব্যতিক্রম হলে ঠান্ডা পানিতে ভিজে দূরবস্থার শেষ থাকবেনা।

আরো কিছুদুর এগিয়ে যেতেই লক্ষ করলাম নদীর পাড়ে চারটে বুনো হাঁসের বাচ্চা কোথা থেকে উড়ে এসে ঠান্ডায় জবু থবু হয়ে বসে আছে। আমরা বাচ্চাগুলোকে ধরার জন্য ভীষন কৌতূহলী হয়ে পড়লাম। আর চুপি চুপি বলাবলি শুরু করলাম এগলোকে ধরে বাসায় নিয়ে যাব এবং জবাই করে বনভোজন খাব দারুন মজা হবে।

যেই ভাবা সেই কাজ আমরা বাচ্চাগুলোকে ধরার এক মহা পরিকল্পনা করে ফেললাম। আমরা ছিলাম চারজন বাকি তিনজন হালিম,রাহুল এবং রফিক। আমাদের নৌকাই জেলেদের একটি জাল ছিল সেটা দিয়েই হাঁস গুলোকে ধরার পরিকল্পনা। কথা হল রফিক এবং রাহুল পাড়ে নামবে এবং পিছন দিয়ে দৌড়ে গিয়ে হাঁসগুলোকে তাড়া করবে।

আর আমি ও হালিম নদীতে নৌকার উপরে জাল নিয়ে ওঁ পেতে থাকবো যেই হাঁসগুলি নদীতে নেমে সাতাঁর দিয়ে আমাদের নৌকার কাছাকাছি আসবে আমরা হাঁসগুলির উপরে জাল চালিয়ে তাদেরকে ধলে ফেলবে। কথা অনুযায়ী এবার রফিক ও রাহুলকে পাঠানে হল এবং তাড়া পিছন দিয়ে হাঁসগুলির নিকটে যেতেই চারটি হাঁস একসাথে নদীতে নেমে সাঁতার কাটতে লাগল।

এবার আমরা নৌকা বেয়ে হাঁসগুলির কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম এবং তাদের উপর নৌকোর উপর থেকে জাল চালিয়ে দিলাম দুটো হাঁস দ্রুত বেগে সরে পড়ল আর দুটো হাঁস জালের নিচে চাপা পড়লো।

কিন্তু নদীর ওই জায়গাটিতে পানির পরিমান ছিল অনেক বেশী এই সুযোগ নিয়ে হাঁস দুটি ডুব ‍দিয়ে পানির গভীর দিয়ে জাল থেকে অনায়াসে বেড়িয়ে পড়ল। আমরা কিছুটা হতাশ হলাম এবং বিকল্প পরিকল্পনা করতে বাধ্য হলাম।

এবার আমরা চারজন একসাথে নৌকায় উঠলাম এবং হাসঁগুলির কাছাকাছি পৌঁছে চারজন একসাথে জালটি ছুড়ে মারলাম। কিন্তু জালটি হাসেঁর বাচ্চাগুলির উপর পড়লো না । অপরদিকে যেহেতু নৌকাটি ছিল অনেক ছোট আর চারজন একসাথে জালটি চালিয়ে ছিলাম তাতে নৌকাটি খুব জোরে টলমল করতে শুরু করে এবং সকলেই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি।

ওই মুর্হূতে নৌকাটি উল্টে যায় এবং আমরা চারজন একসাথে তীব্র ঠান্ডা পানিতে ডিগবাজি খেয়ে পড়ি। এবং শীতের পোশাক সহ আমরা কাকভেজা হয়ে নৌকো হারিয়ে সাঁতার কেটে তীরে এসে উঠি।

আমাদের র্ব্যাথ্যতা দেখে আশেপাশে দাড়িঁয়ে থাকা লোকজন অট্টহাসিতে হেসে ওঠেন। স্থির হলো হাঁসগুলিকে তাড়া করে ধরবো।

আমরা এবার দৌড় দিয়ে হাঁসগুলিকে ধরার চেষ্টা করি কিন্তু মহাধড়িবাজ হাঁসের বাচ্চাগুলি মুর্হূতেই ডুব দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো এবং আমরা একটা বাচ্চা ধরতেও পুরোপুরি র্ব্যাথ হয়। আমাদের বনভোজনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

অবশেষে ভেজাকাপড় গায়ে তীব্র ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপতে কাপঁতে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ততক্ষনে পশ্চিম আকাশে সূর্য গা ঢাকা দিয়েছে এবং সিদ্ধান্ত হয় পরদিন আবার আমরা হাঁসগুলিকে ধরতে যাব।

লেখক:-মো:নুরুজ্জামান

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান  

    

 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ