চট্টগ্রাম বরিশাল জলবায়ু পরিবর্তনের বড় বিপদে

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:৩১:০৬ || পরিবর্তিত: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:৩১:০৬

চট্টগ্রাম বরিশাল জলবায়ু পরিবর্তনের বড় বিপদে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। বদলে গেছে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরনও। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবও বেড়ে গেছে।

 বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশে সমতল ও পাহাড়ি এলাকাতেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এতে ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়াবে।

গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাংকের ‘দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু উপদ্রুত এলাকা (হটস্পট), জীবনমানের ওপরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যে ক্ষতি হবে, তার আর্থিক পরিমাণ ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ ক্ষতির দিক থেকে শীর্ষে থাকবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১০টি জেলা। এর মধ্যে সাতটি জেলা চট্টগ্রাম বিভাগে।

বরিশাল ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সুপেয় পানির সংকটও তীব্র। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা যোগ হয়ে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও বড় ধরনের হুমকিতে ফেলবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের চন্দ্রপুর ও ভান্দ্রা, পাকিস্তানের হায়দরাবাদ, মিরপুর খাস এবং শ্রীলঙ্কার জাফনা ও পুত্তাদাম জেলায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মানুষের জীবনযাত্রার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই জেলা সমুদ্রপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি।

 সেখানে বিপুল পরিমাণে অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ওই জেলার আর্থিক ক্ষতি ও জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ার এই দুই বিপদই বেশি।

বেশি হুমকির মুখে রয়েছে এমন শীর্ষ ১০টি জেলার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বন্দর, তেল শোধনাগারসহ অনেক বড় বড় অবকাঠামো ওই শহরে গড়ে উঠেছে। এই শহরটিও সমুদ্রপৃষ্ঠের অনেক কাছাকাছি। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এখানকার আর্থিক ক্ষতি অনেক বেশি হবে

। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার পরিমাণও বাড়ছে। চট্টগ্রাম বিভাগে নারীপ্রধান পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১০ শতাংশ। কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি, ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতাও এই বিভাগের মানুষের কম।

ব্যাপক পরিমাণে বন ধ্বংস, জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার প্রতিবেশব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া এখানকার অধিবাসীদের বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর সঙ্গে সেখানে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যাওয়ার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই জেলাগুলোতে অল্প সময়ের অধিক বৃষ্টির কারণে ভূমিধস বেড়ে গেছে। এতে জীবন ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। এই বিভাগে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসও সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা, ২০১২ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভাগটি।

 শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিক থেকেও এই বিভাগ পিছিয়ে আছে। যোগাযোগ অবকাঠামোর দিক থেকে এই বিভাগ সবচেয়ে দুর্বল। এসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা এই বিভাগের কম।

ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক জায়গায় থাকা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকাও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কম বিপদে নেই। এই শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি; প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২ হাজার ৩৩১ জন। এই শহরে অবকাঠামোর পরিমাণও বেশি।

ঢাকা বিভাগের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ নারীপ্রধান, কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ২৯ শতাংশ। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার মানুষের জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষমতা কম।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্য কিছু বিপদের দিকও তুলে ধরেন। একটি সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, দেশের উপকূলীয় এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শহরে, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছে। এর আর্থিক, জীবনযাত্রা ও সামাজিক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব বিপদও বড় শহরে এসে পড়ছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কোন জেলায় কী পরিমাণে পড়বে, তার একটি হিসাবও প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমবে।

জীবনযাত্রার মান সবচেয়ে বেশি কমবে চট্টগ্রাম বিভাগের অধিবাসীদের, ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে বরিশাল, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ঢাকায় জীবনযাত্রার মান কমবে প্রায় ৭ শতাংশ। এরপরে রয়েছে খুলনা (৬ দশমিক ৭ শতাংশ), রাজশাহী (৪ দশমিক ৬ শতাংশ), রংপুর (দেড় শতাংশ)।

প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের আর্থিক ও জীবনমানের ক্ষতি মোকাবিলায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কৃষি খাতের বাইরের খাতগুলোতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বর্তমানে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

এই হার আরও বাড়াতে হবে। কারণ, সামনের দিনগুলোতে কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে, আর কর্মসংস্থান কমবে। ফলে অ-কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সরকারের নজর আছে বলে মন্তব্য করেন।

 একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মাঝখানে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কিছু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওই জেলাটি এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদে আছে। সেখানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে।

এতে ওই এলাকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বনভূমি, জলাশয় ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল ও প্রশংসনীয় কাজ করছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ ওই জেলায় আরও বেড়ে গেছে।

প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনীতিবিদ মুথুকুমারা মানি। আলোচনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করেন পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোলায়মান হায়দার।

২০৫০ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে

এতে ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে

ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ হবে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা

চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ ক্ষতির দিক থেকে শীর্ষে থাকবে

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১০টি জেলা

১০ টির মধ্যে সাতটি জেলা চট্টগ্রাম বিভাগে

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ