একজন রিক্ত মাঝি

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৩:০৯:০২ || পরিবর্তিত: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৩:০৯:০২

একজন রিক্ত মাঝি

অতি দরিদ্র,অভাবি,বঞ্চিত একজন সংগ্রামি জেলে,এবং নৌকার মাঝি নাম তার ফালসিয়া।তার পিতা হারাধন ছিলেন একজন দক্ষ নৌকার মাঝি এবং পৈত্রিক সূত্রে তার ছেলে ফালসিয়া মাঝি উপাধি লাভ করে।

লোকমুখে শোনা যায় পিতার নৌকা চালানোর সকল গুনাবলী সে অর্জন করেছে বাল্যকালেই।সে ছাড়া ভরা বন্যায় নদীতে নৌকা বেয়ে ওই পার যাওয়া ছিল অত্যান্ত দূরুহ কাজ।এবং এ কাজটি অত্যান্ত কষ্টকর হলেও সে হাসিমুখে তা সম্পন্ন করত।কিন্তু বিনিময়ে যা পারিশ্রমিক পেত তা ছিল অতি নগণ্য।এবং অধিকাংশ দিন তার উনুনে অাগুন জ্বলত না।

কাটাতেন অতি অভাবে অত্যন্ত কঠিন এবং দু:সহ জীবনযাপন।তার ছিল চারটি মেয়ে এবং কোন ছেলে ছিল না।এত কষ্টের মাঝেও তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকত।তার সবচেয়ে একটি বড় গুন ছিল তার সততা।

সে মহাজনদের নৌকায় দৈনিক পারিশ্রমিক হিসাবে কাজ করত।সে তার জীবদ্দশায় শেষদিন পর্যন্ত নৌকার মাঝিগিরি করেছেন এবং এই র্দীঘ সময়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য মানূষ প্রতিদিন তার নৌকায় করে নদী পাড়ি দিয়েছিলেন।

কারো কাছে তিনি অন্যায় ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেননি।বরং প্রতিদিন অনেককেই তিনি বিনা পয়সায় নদী পার করে দিয়েছিলেন যদিও এরজন্য তার মহাজনরা তাকে সবসময় তিরস্কার করত।

এবং অনেক সময় তাকে তার পেশা থেকে বরখাস্ত করা হত।যার জন্য অসংখ্য দিন তাকে স্বপরিবারে অনাহারে অর্ধাহারে কাটাতে হয়েছে।অধিকাংশ দিন সকালবেল তাকে দেখা গেছে এক টুকরো শুকনো রুটি দিয়ে তার সকালের নাস্তা সারতে।

এলাকার সকল লোকের সাথে তার অতি ঘনিষ্ট পরিচয় ছিল এবং সে নৌকায় পারাপারের জন্য  কখনো কারো আত্নীয় সজনের কাছে ভাড়া আদায় করত না।কিংবা কারো সাথে দুর্ব্যাবহার করত না ।ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তার ছিল উদার হ্রদয়।সে জানত যে তার এলাকার কয়েকটি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা একমাত্র তার নৌকায় করেই ওপারে স্কুল-কলেজে পড়তে যায়

এবং তার নৌকা ছাড়া অন্য কোন পথে যাতায়াত করা সম্ভব নয়।এবং ছাত্র-ছাত্রীরা খুব সকাল-সকাল তাদের স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিত।আর তাদের র্নিবিঘ্নে সময়মত নদী পার করে দেওয়ার জন্য সূর্য উঠার আগেই সে নৌকো নিয়ে ঘাটে হাজির হত।এবং অতি যত্নসহকারে তাদের নৌকাযোগে নদী পার করে দিত।

এবং প্রতিদিন সে খুব ভোর থেকে শুরু করে রাত কমপক্ষে এগারোটা অবধি নৌকা বাইত।কিন্তু তবু তার ছিল না কোন অভিমান কিংবা অভিযোগ।বর্ষাকালে তীব্র বর্ষণের সময় মাথায় একটা প্লাস্টিক বেধেঁ নিয়ে চলত তার অবিরাম নৌকা বেয়ে চলা।

ঝড়-বৃষ্টির রাতেও তাকে দেখা যেত নৌকার এককোণে দাঁড় নিয়ে বসে আছেন অভাগা ফালসিয়া মাঝি।মাঝে-মাঝে সে নদীর তীরে ছোট্ট একখানা কুঁড়ে ঘর তুলে রাতের বেলা কোন রকমে মাঁথা গুজে পড়ে থাকত।

এবং মধ্যরাতে দুর-দুরান্ত থেকে অনেক লোক এসে নদী পার হওয়ার জন্য তাকে জাগিয়ে তুলতো।অতি ক্লান্ত থাকার পরেও সে তাদের কে নির্বিঘ্নে নদী পার করে দিত।এই ফালসিয়া মাঝি সবার সম্মুখে থেকেও সবসময় সবার অগোচরে থেকে গিয়েছিলেন।কেউ তার দু:খ-কষ্ট বোঝার চেষ্টো করেননি।

এবং একদিন সবার অজান্তে রাতের আাঁধারে স্রষ্টার ডাকে সারা দিয়ে চলে গেছেন ওপারে,যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে আসে না।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সবাই তাকে শুধু প্রয়োজনে ব্যবহার করে গেছেন।ওই নদীর উপরে এখন ব্রীজ নির্মিত হয়েছে এখন আর কাউকে নৌকা করে নদী পার হতে হয় না।

সবাই হয়তো একদিন ভূলে যাবে ফালসিয়া মাঝিকে তার রেখে যাওয়া স্মৃতিকে।কিন্তু কখনো ভূলবে না তার প্রিয় সেই ঢেপা নদী যেখানে কেটেছে তার শৈশব থেকে শুরু করে যৌবনের পড়ন্ত সময় পর্যন্ত।

লেখক:মো:নুরুজ্জামান

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান  

 

   

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ