কমলদহের মায়াবতী ‘ঝর্ঝরি ঝরনা’

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৩:৪৬:৫৫

কমলদহের মায়াবতী ‘ঝর্ঝরি ঝরনা’

নাজমুল হক রাইয়ান,স্টাফ রিপোর্টার

প্রথমেই বলে নিতে হয় যানজটের কারণে আমাদের পৌছতে খানিকটা দেরি হয়। তারপরেও মোটামুটি ঠিক ছিল সব কিছুই।
আমরা নেমে ছিলাম বড় দারোগার হাট। সেখানেই সকালে নাস্তায় ভাত খেয়ে আমরা এগিয়ে চলি ঝরনার উদ্দেশ্যে। আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে বেশ খানিকদূর এগিয়ে যেতে হয়।
পথের দুপাশে সারিসারি গাছ।
মাটিতে গাছের ছাঁয়া।
নরম রদ্দুর লাগে গায়।
বাতাসের মৃদু দোল।
স্বচ্ছ আকাশ।
জলের পুকুর, আর পুকুরে হাসদের খয়েরি পা।
ছোটছোট ঢেউ আকাশের ছাঁয়া এলোমেলো করে দিচ্ছে খনে খনে। নিজেকে অন্য কোথাও খুঁজে নিচ্ছিলাম প্রতিমুহূর্তেই। আমি এ সব দেখে দেখে বেশ পিছনে। সবার মত দ্রুত এগুতে পারছিনা, নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছিনা এই দৃশ্যের পাতা থেকে। তবুও এগুতে হয় এগিয়ে যাই।

হঠাৎ
চোখ পড়লো আকাশের গায়।
সাদা ধপধপে মেঘ নীলে আছড়ে পড়েছে।
পাহাড়ের কার্নিশ ঘেঁষে মেঘের হাসি।
এতো দিন দেখেছি মেঘের কান্না, কিন্তু আজ মেঘ দেখে মনে হচ্ছে মেঘের হাসি-ই আকাশের বুকে শ্রেষ্ঠতম।
কেউ যেন এলিয়ে সাদা চুল,
আকাশের গা জুড়ে ফোটায় ফুল,
রক্তজবা নয়, সাদা রজনীগন্ধা ও বকুল।
ফেলে যেতে হয় সে পথ আমাকে।
চলতি পথে গাঁয়ের চিরচেনা অপরিচিত অনেকের সাথে দেখা হয়। ছোট ছোট বাবুদের সাথে, তারা কেউ কেউ আমাকে দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। আমিও হাসতে থাকি মৃদু করে। এবং জানতে চাই কেমন আছে? লজ্জায় যেন মুখে ঘোমটা টেনে পালিয়ে যায় আঁকাবাঁকা পথ ধরে একটু দূরে কোন সুপারি পাতার আড়ালে।
এভাবেই চলতে হবে আরো কিছুটা পথ।
একটা ছোট্ট উঁচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে এসে থেমে যাই। শুরু হয় ঝিরিপথ।
স্বচ্ছ পানি
পাথর মাটি
সবুজ শেওলা
আর চিংড়িমাছ।
এগুতে থাকি ঝিরির জল মাড়িয়ে
কেমন এক ছপছপ শব্দ। মনে হয় কোন এক অচেনা বাধক তালে তালে তুলছে সুর ছপ, ছপ, ছপ, ছপ,। পানির মিষ্টি গন্ধে নাক কুটকুটাতে থাকে।।


কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে প্রথমেই
'ঝর্ঝরি ঝরনা' দেখা।।

ঝরনার দিকে চোখ পড়তেই ভিতর টা কেমন হু হু করে উঠে। স্রষ্টার সৃষ্টি কি অপরুপ।
না জানি এই ঝর্ঝরির বুকে কত মানুষ তৃষ্ণা মিটায়। সে মায়াবতী ও অপরুপ রুপের অধিকারী। আমার কেন যেন মনে হয়েছিল এই ঝরনাটি কন্যা ঝরনা। ওর নাম ঝর্ঝরি। দেখতেও কিছুটা এলোকেশীর মত। নিজেকে যেন ঘুচিয়ে রাখতে পারেনা এই সবুজ অরণ্যে। বাবার আহ্লাদী মেয়ের মত এখান থেকে সেখান থেকে খয়ে খয়ে পড়ছে।
আদুরে আটখানা। ঝর্ঝরি বলে চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে হল। মনে হল ঝর্ঝরি আমার জন্য অপেক্ষারত। আমাকে এখনি বুকে টেনে নেবে আদরের আ দিয়ে। তার স্বচ্ছ চুলের জলে আমাকে ভিজিয়ে দেবে একচিমটি। আমি বুক ভরে নিশ্বাস নিব পরম বিশ্বাসে আর ঝর্ঝরির গভীর প্রণয়ে।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ