প্রকাশিত: ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০৪:৪৩:৫৪
বর্ণবাদ বিরোধিতার নামে তিনি জীবনভর লড়েছেন বিচিত্র রঙে রঙিন এক পৃথিবীর স্বপ্ন বুকে নিয়ে। ছিলেন বৈচিত্র্যের উপাসক, তাকে চিনেছিলেন সুন্দরের উৎস হিসেবে। প্রতিশোধ আর ঘৃণায় উন্মত্ত পৃথিবীতে তিনি হিংসার আগুনে ঢেলেছিলেন শান্তির জলধারা, উদাহরণ হাজির করেছিলেন ‘সমন্বয়’র এক বাস্তবতা প্রতিষ্ঠা করে। আমৃত্যু বিচিত্র পৃথিবীর সত্য-সুন্দর-শুভ আর মঙ্গলের পক্ষে লড়াই করা সেই মানুষ নেলসন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকী আজ। আজ থেকে ১০০ বছর আগের আজকের এই দিনে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন পৃথিবীকে আলোকিত করতে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার দেশে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সে দেশে গেছেন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে। জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বই আজ স্মরণ করছে কিংবদন্তি ম্যান্ডেলাকে।
ম্যান্ডেলার শততম জন্মদিনে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে এক বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। সফররত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন। জাতিসংঘ দিনটিকে উদযাপন করবে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে। ২০১০ সালে জাতিসংঘ ১৮ জুলাইকে ম্যান্ডেলা দিবস ঘোষণা করে। সারা বিশ্বেই স্মরণ করা হবে ম্যান্ডেলার স্মৃতি।
১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেওয়া ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষের কাছে ‘মাদিবা’ নামে পরিচিত। ৯৫ বছরের জীবনকালের দীর্ঘ ২৭ বছর কেটেছে কুখ্যাত রবেন দ্বীপের কারাগারে। অথচ কারাগার থেকে বেরিয়ে সেই ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের ক্ষমা করে দেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে তিনি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার দিকে নজর দেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮-এর নির্বাচনে বর্ণবাদে বিশ্বাসী ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদকামী দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৫ সালে জনগণের সম্মেলনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি মুক্তি সনদ প্রণয়ন করেন তিনি।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন ম্যান্ডেলা। শুরু থেকেই তিনি অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতার করে। পাঁচ বছর মামলা চলার পর তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন।
১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৬১ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর সশস্ত্র শাখার নেতৃত্বে আসেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ার পরিকল্পনা নেন। এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ফের তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে তার দীর্ঘ কারাজীবন।
জীবনের টানা ২৭টি বছর বর্ণবাদী সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এরই মধ্যে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তার সহযোদ্ধারা। দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ এলাকাগুলোতে বর্ণবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শত শত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন। একইবছর দক্ষিণ আফ্রিকার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। ম্যান্ডেলা মুক্তি পান ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে ম্যান্ডেলার ফলপ্রসূ শান্তি আলোচনার সুবাদে ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ম্যান্ডেলা। একইসঙ্গে দেশের প্রথম কৃঞ্চাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হওয়ারও সম্মান লাভ করেন তিনি।
২৭ বছরের কারাবাসের পর ম্যান্ডেলা যেদিন মুক্তি পান সেদিন কারাগারের সামনে ভক্তদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। এ সময় তিনি তার সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দেন সেই কথা, যা তিনি তার বিচারের সময় আদালতে বলেছিলেন। ম্যান্ডেলা বলেন, তিনি এমন এক দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন দেখেন তিনি, যেখানে সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে এক সঙ্গে থাকতে পারবে। তার ভাষায়, ‘এটা এমন এক আদর্শ, যার আশায় আমি বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু যদি দরকার হয়, এই আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’
পুরনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে নতুন আফ্রিকা গড়ার কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা অতীতের তিক্ততার প্রতিশোধ নেওয়ার বদলে তার সাবেক শ্বেতাঙ্গ নিপীড়কদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। শুরু হয় এক নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার পথচলা। বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ক্ষমতা আঁঁকড়ে রাখেননি, প্রথম কার্যকালের শেষেই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে অবসর নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য ম্যান্ডেলা এবং রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ককে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৯৩ সালে। এছাড়া গত চার দশকে ম্যান্ডলা পেয়েছেন আড়াইশ’র বেশি পুরস্কার।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই কিংবদন্তি নেতা ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জীবনের সীমানা পেরিয়ে চলে যান অনন্তলোকে। বিশ্বজুড়ে তার কোটি কোটি ভক্তের জন্য রেখে যান বৈষম্যহীন বৈচিত্র্যময় সুন্দরের স্বপ্ন।
প্রজন্মনিউজ২৪/মুতাছিম
যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ নিহতের ঘটনার বিচার চেয়েছে নতুনধারা
গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, এ আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো : মির্জা ফখরুল
ঢাকায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৪
খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়লো
ইউ এন ও এর সভাপতিত্বে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন
ভারত বিষয়ে কৌশল ঠিক করছে বিএনপি
ফেনীতে গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল বিএনপি নেতার
সিলেট সেনানিবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once