দুয়ারে গুনাহ মাফের মাস

প্রকাশিত: ১৭ মে, ২০১৮ ১২:০৯:১০

দুয়ারে গুনাহ মাফের মাস

সমাজে প্রচলিত আছে রহমত, মাগফিরত ও নাজাতের আলাদা আলাদা ১০ দিন নির্ধারিত। এই মর্মে একটি হাদিসও পাওয়া যায়। শুদ্ধতা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞরা কলম ধরেছেন। তবে কোরআন ও হাদিসে রমজান মাসের যত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তার আলোকে আমরা বলতে পারি রমজানের প্রতিটি দিনই রহমত, মাগফিরত, নাজাত ও বরকতের মাস।

এই মাস যে ক্ষমা প্রাপ্তির মাস, সে ব্যাপারে হাদিসের কিতাবগুলোতে ব্যাপক হাদিস পাওয়া যায়। তার মধ্য থেকে কয়েকটি আমরা উপস্থাপন করছি: আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে সিয়াম পালন করবে, ইমান ও হিসাবের সঙ্গে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ 

(বুখারি, কিতাবুল ইমান, হাদিস নং-৩৮)

তিনি আরও বলেন

‘যে ব্যক্তি রমজানে কিয়াম করলো রাতের বেলায় ইমান ও হিসাবের সাথে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

(বুখারি, কিতাবুল ইমান, হাদিস নম্বর-৩৭)

‘যে  ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে কিয়াম করলো ইমান ও হিসাবের সাথে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ 

(বুখারি, কিতাবুল ইমান, হাদিস নম্বর-৩৫)

তাছাড়া রমজান মাস এমন মাস যে মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়। আর শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়। এই মর্মে একটি হাদিস রয়েছে যা হয়রত আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারির ‘সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে’ যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শিকলাবন্ধ করা হয়।’

সুতরাং, এই পর্যায়ে আমরা বলতে পারি এই মহান মাসে আমাদের উচিত অতীতের সব অপরাধের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করা। কারণ রমজান মাসে সিয়াম অবস্থায় যে দোয়া করা হয় তা মহান আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন বলে রাসূল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

তিন ব্যক্তির দোয়া বাতিল করা হয় না, তাদের একজন হলো সিয়াম পালনকারী যতক্ষণ না সে ইফতার করছে।’(তিরমীযি, দোয়া অধ্যায়, হাদিস নম্বর-৩৫৯৮)

তাছাড়া কোরআনুল কারিমে রমজান ও সিয়ামের যে বিধানের আয়াতগুলো উল্লেখ রয়েছে সেখানে আল্লাহকে ডাকার কথাও উল্লেখ আছে। যেখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এই মাসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া আমাদের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা বাকারার ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫, ১৮৭ নম্বর আয়াতে রমজান মাস ও সিয়ামের বিধি বিধান এর কথা বিস্তারিত বলেছেন। কিন্তু ১৮৬ নম্বর আয়াতটা একেবারেরই ভিন্ন। এই আয়াত না রমজান মাস এর কথা উল্লেখ আছে না আছে সিয়ামের বিধান। এখানে আছে আল্লাকে ডাকা প্রসঙ্গে।

মহান আল্লাহ বলেন,

অনুবাদ: যখন আমার কোনো বান্দা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো কাছেই। যখনই কেউ আমাকে ডাকে তখনই আমি তার ডাকে সাড়া দেই। সুতরাং, তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে। তবেই তারা সঠিক পথ পাবে। (সুরা বাকারা, আয়াত-২৮৬)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমন রব ও মালিক যিনি খুশি হন যখন তার কাছে কিছু চাওয়া হয় এবং অসন্তুষ্ট হন যখন কেউ তার কাছে চায় না। আমরা আজ আমাদের আল্লাহর কাছে চাওয়া পাওয়াগুলো অন্য কারও কাছে দিয়ে দিয়েছি। ইমাম সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছি, কিন্তু নিজেরা একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহর কাছে কবে নিজের চাহিদার কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলেছি সেটা হয়তো হিসাব করে ও পাওয়া যাবে না।

 আজ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে আল্লাহর কাছে চায়, মানুষকে বলে আমার জন্য দোয়া করো কিন্তু নিজে চায় না। এই প্রথা ভাঙতে হবে। আমাকেই চাইতে হবে যা আমার দরকার তবেই আল্লাহ খুশি হবেন এবং আমার জন্য কল্যাণকর হলে তা দান করবেন। তিনি সমস্ত অপরাধ ও ক্ষমা করে দিতে পারেন।  তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করেন সব অপরাধ (সুরা যুমার, আয়াত-৫৩)

অন্য আয়াত তিনি বলেন,

অনুবাদ: আর যারা অশ্লীল কাজ করে এবং নিজের জীবনের উপর অত্যাচার করে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে কে আছে আল্লাহ ছাড়া যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন, তারা যা করেছে জেনে-শুনে তার উপর অটল না থাকে। (সুরা আলে ইমরন, আয়াত-১৩৭)

এই মাসের সুন্দর পবিত্র সময়গুলো বিভিন্ন পন্থায় নষ্ট না করে বেশি বেশি নিচের  দোয়াটি পড়া যেতে পারে যাকে বলা হয় ইসতেগফার অর্থ্যাৎ, আল্লাহর কাছে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করা। যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন একটি কাপুরুষীয় অপরাধ এবং বড় কবিরাহ গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এই দোয়াটি এতটাই শক্তিশালী যে ব্যক্তির সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় এমনকি যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ব্যক্তিকেও। বেলাল ইবনে ইয়াসার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

অনুবাদ: যে ব্যক্তি বলে,

আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি’ তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় যদিও সে যুদ্ধের ময়দান খেকে পলায়নকৃত হয়।  (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস স্বলাত, হাদিস নম্বর-১৫১৭)

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা আমরা বলতে পারি যে, মহান আল্লাহ সব সময়ই আমাদের ক্ষমা করেন। যত বড় অপরাধই হোক না কেন তার কাছে তওবা করলে, ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। তাই আমাদের উচিত সব ধরনের অপরাধের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং মাফ করিয়ে নেওয়া। কেননা রমজান মাসে যে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করাতে পারলো না তাকে রাসূল (সা.) ভৎর্সনা করেছেন। হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন

অনুবাদ: তার নাক ধুলায় মলিন হোক যে রমজান পেলো অথচ নিজেকে ক্ষমা করাতে পারলো না।  (মুসনাদে বাযযার, মুসনাদে জাবের ইবনে সামুরাহ, হাদিস নম্বর-৪২৭৭)

পাঠক, আমরা বলতে চাই এই সমাজ অপরাধপ্রবণ সমাজ, এই সমাজে আপনি ভালো হতে চাইলেও সামাজিক প্রতিষ্ঠিত অপরাধে আপনাকে জড়িয়ে পড়তে হবে। তাছাড়া রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎ বাণী রয়েছে যে, একটা সময় মানুষ সকালে মুমিন তো বিকেলে কাফের হয়ে যাবে, আগুন হাতে রাখা সহজ হবে কিন্তু ঈমান রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এই চরম ফেতনার সময়ে একমাত্র রমজানের কঠোর সাধনা ও প্রশিক্ষণ আপনাকে বিপদের সময়ে আল্লাহর পথে অটল থাকা শিক্ষা দেবে।

 তাই এই রমজান হোক আপনার আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রমজান মাস, হোক নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস, সব মন্দ থেকে নিজেকে আলাদা করার মাস, সব শিরক বিদয়াত ও অনৈসলামিক কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করার মাস। এই মাসের ক্ষমা দিয়ে হোক আমাদের আগামীর পথ চলা মহান আল্লাহর কাছে সেই তাওফিক প্রার্থনা করছি। আমিন শেষ করার আগে একটি আয়াত উল্লেখ করতে চাই,

অনুবাদ: যে কোনো খারাপ কাজ করে এবং নিজের নফসের উপর অত্যাচার করে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে অবশ্যই আল্লাহকে পাবে ক্ষমাকারী রহমকারী হিসেবে

(সুরা নিসা, আয়াত-১১০)

প্রজন্মনিউজ২৪/মোঃ জিবুর রহমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ