নিরাপদ পানি খাচ্ছি তো!

প্রকাশিত: ১০ মার্চ, ২০১৮ ০১:৩০:০৩

নিরাপদ পানি খাচ্ছি তো!

হাসানুর রহমান: পানির অপর নাম জীবন। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে মানুষের প্রয়োজন নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি। আমাদের ব্যস্ত জীবনে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে আমরা বোতলজাত পানি বা জার পানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

প্রতিদিন হোটেল বা রেস্তোরাঁ, অফিস, রাস্তার পাশের দোকান থেকে শুরু করে, উৎসব-অনুষ্ঠান, ভ্রমণপথে, বাসাবাড়িতে এসব উৎপাদিত (বোতলজাত ও জার পানি) খাবার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা যারা প্রতিনিয়ত এসব বোতলজাত খাবার পানি খেয়ে যাচ্ছি, কখনো কি ভেবেছি এই পানি কতটা নিরাপদ? এসব বোতলজাত খাবার পানি পান করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছি না তো?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ও সাধারণ জনগণকে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতন করতে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। বোতলজাত ও জার পানি সম্পর্কে বিএআরসি যেসব তথ্য প্রদান করেছেন তাতে আমরা আমাদের জীবনকে ক্রমে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছি।

 বিএআরসির ঐ গবেষণায় দেখানো হয়েছে, পথে ঘাটে, রাস্তার পাশের দোকানে এসব জারের পানিতে রয়েছে ‘মলমূত্রের জীবাণু’যা ছড়াচ্ছে আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা, ইউরিন ইনফেকশন ও জন্ডিসসহ অনেক জীবনঘাতী রোগ। সর্বস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান এক্রিডেটেড ল্যাবরেটরি এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক নমুনা পানিসমূহের পরিমাণগত ও গুণগতমান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দিয়েছে তারা।

বিশেষত শাকসবজিতে কীটনাশক দূষণ, বোতলজাত ও জার পানিতে বিদ্যমান খনিজ উপাদানের মাত্রা ও গুণাগুণ নির্ণয়ে ‘Qualitative Assessment of Bottled Drinking Water and Evaluation of Pesticides Residue at Raw, Washed and Cooked Vegetables’ শীর্ষক প্রকল্পে ঢাকার ২৪টি স্থানসহ দেশের সব বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ২৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণা পরিচালনা করে সরকারি সংস্থা বিএআরসি। পরীক্ষায় প্রায় সব জারের পানি দূষিত প্রমাণিত হয়। কয়েকটি ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি নিরাপদ পাওয়া যায়।

জার পানির ক্ষেত্রে ঢাকার ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, চকবাজার, সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী, আমিনপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে।

এছাড়াদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা শহর ,ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল , রাজশাহী , কুমিল্লা, ফেনী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, পটুয়াখালী, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নরসিংদী  প্রভৃতি স্থানসমূহ হতে পানির উপাদানসমূহের পরিমাণগত ও গুণগতমান বিশ্লেষণে ৩৫টি বিভিন্ন ব্যান্ডের বোতলজাত পানি ও জার পানির ২৫০টি  নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

বিএআরসির প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বোতলজাত ও জারের পানিতে আছে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যেমন ই-কলি (Escherichia coli)। এই ব্যাকটেরিয়া থেকে হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, বমিভাব, পেটব্যথা, জ্বর-ঠান্ডা। এ ছাড়া এটি আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলস্বরূপ পরবর্তীতে যে কোনো রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব দ্বারা খুব সহজেই আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ১০০ মিলি জার পানির নমুনায় ১ থেকে ১৬০০ এমপিএনের বেশি ই-কলি পাওয়া গেছে, যেখানে বিএসটিআইয়ের মান অনুযায়ী শূন্য মাত্রার ই-কলি থাকা উচিত। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড মান অনুযায়ী পানিতে নাইট্রেট, লিড, ক্রোমিয়াম ও আয়রন থাকা যাবে না; কিন্তু নমুনা জারের পানিতে এগুলো পাওয়া গেছে।

এ গবেষণায় বিএআরসি ব্র্যান্ড বোতল ও জার পানির বিভিন্ন উপাদানগুলোর পরিমাণগত ও গুণগত মান বিশ্লেষণ করে তার ফল প্রকাশ করেছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, খাবার পানিতে বিভিন্ন উপাদান কী পরিমাণে থাকা উচিত এবং ব্র্যান্ড বোতলজাত পানি ও জার পানিতে তা কী পরিমাণে আছে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ব্র্যান্ড বোতলজাত পানি বিডিএস মান অনুসরণ করতে চেষ্টা করলেও তা যথাযথ নয়। বোতলের গায়ে কলিফরম বা ফ্যেকাল কলিফরমের কোনো উল্লেখ থাকে না। অন্যদিকে জার পানি কোনো গুণগত মানই বজায় রাখে না।

ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান জনগণের খাবার পানির চাহিদার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব দূষিত জার পানি ও ব্র্যান্ডবিহীন বোতলজাত পানির ব্যবসা করছে আর সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে বিষাক্ত পানি। কিন্তু এসব ব্যবসায়ী কীভাবে ব্যবসা করছেন, যেখানে পানি উৎপাদন, বোতলজাত ও বাজারজাত করতে গেলে বিএসটিআই, ওয়াসা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি ও লাইসেন্স নিতে হয়।

বিএআরসি তাদের গবেষণায় এসকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু পরামর্শের কথা বলেছে, যেমন, সাধারণ মানুষদের সচেতন হতে হবে, ফুটানো পানি ব্যবহার করতে হবে এবং জার পানি ও বোতলজাত পানি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে,সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত বাজার পরিদর্শন ও পানির গুণগত মান পরীক্ষা করতে হবে এবং অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪.কম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ