তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরের সুপারিশ অনুযায়ী তাহমিদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হাসনাত রেজাউল করিমকেও ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে হাসনাত গুলশান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
জামিন পাওয়া তাহমিদ আদালতে হাজির হলেও, মূল মামলায় গ্রেপ্তার হাসনাত করিমকে ৫৪ ধারায় মামলায় আদালতে হাজির করা হয়নি। তিনি কারাগারে রয়েছেন।
৫৪ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে ওই দুইজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
বুধবার এ বিষয়ে শুনানি করে মহানগর হাকিম মো. নূর নবী অব্যাহতির আদেশ দেন বলে জানান আদালত পুলিশের এসআই রণক কুমার ভক্ত।
তাহমিদের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, “যেহেতু তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা তথ্য নেই। হলি আর্টিজানের ঘটনায় যেহেতু সে জড়িত নয়, মূল মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি, সেহেতু সন্দেহভাজনের তালিকা থেকে তার নাম খারিজ করে দেওয়া হোক। তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।”
তাহমিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে তথ্য গোপনেরও একটি অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্তে পুলিশ গত সপ্তাহে আবেদন করেছিল আদালতে। ওই আবেদনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি আদালত।
গত ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মি নিহত হওয়ার পর সকালে সেখান থেকে উদ্ধার ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত।
এ ঘটনায় উদ্ধারদের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও সে সময় তাহমিদ ও হাসনাত বাসায় ফেরেননি বলে তাদের পরিবার জানায়।
এরপর গত ৩ অগাস্ট এই দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। পরে হাসনাতকে গুলশান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও তাহমিদকে বাদ দেওয়া হয়।
জঙ্গিদের সঙ্গে তাহমিদের ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হলেও তাহমিদকে ১৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানায়, গুলশান হামলার ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ তারা পায়নি।
আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে তাহমিদ গুলশান হামলার একদিন আগে দেশে ফেরেন। ওই দিন ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য।
৫৪ ধারার অভিযোগের মামলায় গত ২ অক্টোবর তার জামিনের আবেদন করা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা তা মঞ্জুর করেন। কয়েক ঘণ্টা পর কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এখনও গ্রেপ্তার থাকা হাসনাত করিম গুলশান হামলায় কতটুকু জড়িত, সে বিষয়েও এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটির প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম সোমবার বলেন, “তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টিএফআই সেলেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। দুই জিজ্ঞাসাবাদের ফলাফলেই জানা যাবে তিনি কতটুকু জড়িত।”
‘প্রমাণ না পাওয়ায় অব্যাহতি’
অপরাধে সংশ্লিষ্টতার ‘যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ’ না পাওয়ায় তাহমিদকে ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
দুর্গা পূজার আগে বুধবার ঢকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তা প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে এসে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “মামলার তদন্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে হয়। আমরা ইচ্ছা করলেই কাউকে দোষী বা নির্দোষ বলতে পারি না। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তা করতে হয়। যিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন, গ্রহণযোগ্য যুক্তিসঙ্গত কোনো প্রমাণাদি না পাওয়ায় তাকে ওই ঘটনা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।