কতটা কাজ করছে ৯৯৯

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮ ১১:৫২:৪৩

কতটা কাজ করছে ৯৯৯

জুলাই ৫, ২০১৭। সকাল সাড়ে ৯টা। বাসায় শুধুমাত্র ৩ বছর বয়সী এরজা ওয়াকার ও তার মা ক্যাসি ওয়ালেস। ২৬ বছর বয়সী ক্যসি সন্তানের জন্য কেক বানাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করেই মেঝেতে পড়ে যান ক্যাসি।

এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন না হয়ে মায়ের ফোন তুলে যুক্তরাষ্ট্রের ইমার্জেন্সি নম্বর ৯১১ এ ফোন করে ওয়াকার। মার্কিন ইমার্জেন্সি কর্মীদের সে জানায়, মা পড়ে গেছেন। তিনি চোখ খুলছেন না। ফোনে ইমার্জেন্সি কর্মীদের নিজের ও মায়ের নাম জানায় সে। প্রশ্নের জবাবে বাড়ির রঙ ও মায়ের গাড়ির রঙেরও সঠিক বর্ণনা দেয় ওয়াকার। আর এই তথ্যের মাধ্যমেই বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের করেন ইমার্জেন্সি কর্মীরা। বাড়িতে ঢুকতেই ইমার্জেন্সি কর্মীরা দেখতে পান, ক্যাসি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছেন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সারারাত চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

এ ঘটনার পর দেশটির গণমাধ্যমে নায়ক হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় ওয়াকারকে। তবে শুধুমাত্র তিন বছর বয়সী এই শিশুই নয়, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার শিরোনাম দেখা যায়। প্রায় ১ বছর পরীক্ষামূলকভাবে চলার পর দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালনায় গেল ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এই সার্ভিস পুরোপুরিভাবে চালু হলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে এ ধরনের সুবিধার কথা চিন্তা করা অনেকটাই আকাশচুম্বী ভাবনা। ফোনের যেকোনো অবস্থাতেই ইমার্জেন্সি নম্বরে ফোন দেয়ার সুযোগ থাকার কথা থাকলেও টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতার কারণে শুধুমাত্র কিছু হ্যান্ডসেট বাদে বেশিরভাগ হ্যান্ডসেট থেকেই লকড অবস্থায় ফোন করা যায় না। প্রযুক্তিবিদরা বিষয়টিকে অবহেলা বলে বর্ণনা করলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই সকল ফোন থেকেই লকড অবস্থায় ফোন করা যাবে, সঙ্গে যুক্ত করা হবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।

শিশু, বৃদ্ধ ও জরুরি অবস্থার কথা বিবেচনা করে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই ইমার্জেন্সি নম্বরটিকে তিন সংখ্যায় রাখা হয়। যাতে নম্বরটি মনে রাখা খুব সহজ হয়। আর কল দেয়ার ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা রাখা হয় যাতে যেকোনো ব্যক্তি, যেকোনো অবস্থায় থেকেই নম্বরটিতে ফোন করতে পারেন। বেশিরভাগ দেশে সিমকার্ডবিহীন হ্যান্ডসেট থেকেও ফোন করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে সিমকার্ডবিহীন হ্যান্ডসেট থেকে ইমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করা তো দূরের কথা, কী-প্যাড লকড করা থাকলেও বেশিরভাগ হ্যান্ডসেট থেকেই ডায়াল করা যায় না। লকড অবস্থায় ডায়াল করলে কমান্ডে বলা হয়, ৯৯৯, ইজ নট এন ইমার্জেন্সি নম্বর।

ইমার্জেন্সি নম্বর প্রসঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ সাইফুল ইসলাম সময় নিউজকে বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় বাসায় শুধুমাত্র আমি এবং আমার ছয় বছর বয়সী নাতনি থাকি। ছেলে এবং ছেলের বউ কর্মজীবী হওয়ায় সপ্তাহে ছয়দিনই তারা বাসার বাইরে থাকেন।

আমি হার্টের রোগী। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফোনটিও সাধারণত লকড করা থাকে। কোনো দুর্ঘটনা হলে সে খবর এই বাচ্চা কীভাবে ইমার্জেন্সি নম্বরে জানাবে।

তিনি আরও বলেন, ইমার্জেন্সি মিনস ইমার্জেন্সি। জরুরি অবস্থায় বাচ্চার কথা দূরে থাক। বিশ্বে অনেক নজির রয়েছে, দুর্ঘটনায় পড়ে সাধারণ ভুলের জন্য প্রাণ হারানোর। সেখানে স্মার্টফোন পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা থাকলে কারও বিষয়টি মনে নাও পড়তে পারে। তাই এ নম্বরটির ব্যবহার যত সহজ করা যায় ততোই ভালো।

এ বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ সালাহউদ্দিন সেলিম  বলেন, ফোন লক করা অবস্থায় ফোন দেয়ার সুযোগ না থাকার বিষয়টি প্রযুক্তিগত দুর্বলতা। ইমার্জেন্সি নম্বরটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হলেও কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানের অভাবেই থেকে গেছে এ সমস্ত দুর্বলতা। বিশ্বের সব দেশে এই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে এটি এখনও চালু করা হয়নি। এজন্য তাদের অবহেলাও কিছুটা দায়ী।

তবে এটি কার্যকরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার পরামর্শের ভিত্তিতে নম্বরটিতে সকল ধরনের ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে। আইফোনসহ বেশকিছু হ্যান্ডসেট থেকে লকড অবস্থায় এখনও ইমার্জেন্সি নম্বরটিতে ফোন করা যাচ্ছে। শুধুমাত্র লকড অবস্থায় ফোন করা নয়, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সরও ব্যবহার করা হবে নম্বরটিতে। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত এই নম্বরটিতে আসা প্রায় ৩৩ লাখ ফোন কল নিয়ে রিসার্স করেছি। এই নম্বরের সুযোগ-সুবিধাকে আরও কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সেটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো আমাদের এ নম্বরটি থেকেও সকল ধরনের সহায়তা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেয়া সম্ভব হবে।

নম্বরটির সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এরই মধ্যে নেয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে পলক বলেন, নম্বরটিকে টোল-ফ্রি করা হয়েছে। ফোনে ব্যালেন্স না থাকার পরও নম্বরটিতে ফোন করা যাচ্ছে। আলাদা ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বানানো হয়েছে। অ্যাপে যুক্ত করা হয়েছে চ্যাট বক্স। এটি ব্যবহার করেও সুবিধা নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এরইমধ্যে ইমার্জেন্সি নম্বরটিতে ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে। প্রতিদিন নম্বরটিতে গড়ে চার শতাধিক কল আসে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশের সেবা নিশ্চিত করা গেছে বলেও জানান তারা। এখানে যেসব ফোন আসে সেগুলোর বেশিরভাগই দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড ও ছিনতাইয়ের বলেও জানান তারা।

১৯৩৫ সালের ১০ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের উইম্পোল স্ট্রিটে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন পাঁচ নারী। তখন তাদের প্রতিবেশী সহায়তা করতে চাইলেও কোনো নম্বর না থাকায় তাদের শেষরক্ষা করা যায়নি। ওই ঘটনার পর ১৯৩৭ সালের ৩০ জুন প্রথম ইমার্জেন্সি নম্বর চালু করে যুক্তরাজ্য। ওই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চালু করা হয়েছে ইমার্জেন্সি নম্বর। কিছু

সীমাবদ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশেও নম্বরটি চালু করা হলেও অদূর ভবিষ্যতে সব ফিচারই এর সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আশা সাধারণ মানুষের।

প্রজন্মনিউজ২৪.কম/মাসফি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ