রিমান্ডে গাড়িচালক বিল্লাল

মাদক কারবারের চাঞ্চল্যকর বয়ান

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী, ২০১৮ ১০:৪৪:১৬

মাদক কারবারের চাঞ্চল্যকর বয়ান

মাদক কারবারি হুমায়ুন কবির গাজী। ছিলেন গুলশান-বনানী এলাকার হকার। একপর্যায়ে বনে যান হকার সর্দার। এরপরই শুরু হয় তার মাদক কারবার। তারই গাড়িচালক বিল্লাল রিমান্ডে কবির গাজী সম্পর্কে এ তথ্য দেন। শুধু তাই নয়, কবিরের মাদক সাম্রাজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে বিল্লালের মুখ থেকে। গত ২৪শে ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে গ্রেপ্তার হন বিল্লাল।

ওইদিন বনানী কাঁচাবাজার এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে ৫০ বোতল বিদেশি মদ ও ৭২ ক্যান বিয়ারসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়। মামলাটির তদন্ত করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক আতাউর রহমান। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে কবির গাজী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মঙ্গলবার আদালতে বিল্লাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মো. বিল্লাল জানিয়েছেন, তার বাড়ি ভোলা জেলায়। ৮ থেকে ১০ বছর আগে তাকে গাড়িচালক হিসেবে ঢাকায় নিয়ে আসে একই এলাকার মো. হুমায়ুন কবির গাজী। তিনি হকারি করতেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি হকার সর্দার হয়ে যান। পাশাপাশি বনানী-গুলশান এলাকার অবৈধভাবে মাদক সাপ্লাইয়ার হিসেবে কারবার শুরু করেন।

বৈধ লাইসেন্সধারী মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাইকারি দামে বিদেশি মদ এনে সাপ্লাই দিতেন পুরো ঢাকা শহরে। এর বাইরে ইয়াবার ব্যবসাও শুরু করেন। মাদক বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তারের কারণে তার আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পুরো ঢাকায় মাদক সাপ্লাইয়ের বড় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হয়ে যান গুলশান-বনানী এলাকার মাদক বিক্রেতাদের মূল হোতা। বিল্লাল জানায়, গুলশান-বনানী এলাকায় অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে সুন্দরী, মাসুদ, হৃদয়, সাঈদ খান, দুলাল, ফারুক ও ইসলাম অন্যতম।

এর বাইরে আরো ছোট-বড় অনেক মাদক ব্যবসায়ী আছে। তারা সবাই কবির গাজীর ছত্রছায়ায় থেকে মাদক সাপ্লাইয়ের নেটওয়ার্ক মেইনটেইন করে। তবে কবির গাজীর নির্দেশের বাইরে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তার ইচ্ছার বাইরে কেউ এই ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের চিন্তাও করতে পারে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সে এই কাজ করতো। এমনকি ভোলা জেলাকে কেন্দ্র করে কবির গাজী বড় ধরনের মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

এই কাজে সহযোগিতা করে আসছে কবির গাজীর ছোট ভাই মাসুদ গাজী। এছাড়াও তাদের সঙ্গে তার আপন কয়েক ভাগ্নেও জড়িত। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল আরো জানিয়েছেন, কবির গাজীর বিরুদ্ধে গুলশান-বনানী থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। এ ব্যাপারে বনানী থানায় যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিল্লাল জানায়, কবির গাজী মাদক ব্যবসা করে অন্তত শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। 

বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে এই টাকা রেখেছেন। এর বাইরে তিনি গাজীপুরের  সাইনবোর্ড এলাকায় সাড়ে নয় তলা একটি বাড়ি করেছেন। রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় ১৬ তলার একটি আলিশান বাড়ির কাজ চলছে। গুলশান কাঁচাবাজার এলাকায় তার কয়েকটি দোকান আছে। কবির গাজীর মালিকানাধীন মানি একচেঞ্জ ব্যবসাও রয়েছে। তার নিজের রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার জন্য ৫/৭টি প্রাইভেট কার আছে। গাড়িগুলো দিয়েই শহরের বিভিন্ন স্থানে মাদক পৌঁছে দেয়া হয়।

তিনি নিজে নোয়া গাড়িতে চলেন।  বিল্লাল জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে কবির গাজীর সঙ্গে ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার ও তার নানা কুকর্মের সাক্ষী হওয়াতে মনোমালিন্য চলছিল।  ২৪শে ডিসেম্বর বনানীর ৯ নম্বর রোডের ডি-প্যালেস নামের একটি বাড়ির সামনে মাদকভর্তি প্রাইভেট কারটি পৌঁছে দেয়ার সময় কৌশলে কবির গাজীই তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক মো. আতাউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিল্লালকে আটকের চেষ্টা করছিলাম।

কিন্তু তাকে হাতেনাতে আটকের কোনো সুযোগ হয়নি। ওই দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করা সম্ভব হয়। রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। বিশেষ করে বিল্লাল নিজেই স্বীকার করেছে সে মো. হুমায়ুন কবির ওরফে কবির গাজীর নির্দেশেই কাজ করতো। কবির গাজীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলার বিষয়ে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী বলেন, গুলশানকেন্দ্রিক তার ব্যবসা চলে। বনানী এলাকাতে কম প্রবেশ করে।

তবে বিভিন্ন সময় তার মাদক ব্যবসার সহযোগীদের আটক করার পরে তার নাম আসলে তাকেও আসামি করে মামলা করা হয়। আমরা তাকে আটক করার চেষ্টা করছি।

মানবজমিন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ