প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী, ২০১৮ ০৪:১৫:২১
বাবরী মসজিদ ভাঙার এক রক্তাক্ত ঘটনার সাক্ষী ভারতীয় উপমহাদেশ। উগ্রবাদী হিন্দুদের বিধ্বংসী ওই কাণ্ডে কেবল ঐতিহাসিক ওই মসজিদই ভাঙেনি, ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছেন বহু মুসলিম।
যারা ২৫ বছর আগে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের মাথায় উঠে শাবলের আঘাত মেরেছিলেন তাদেরই একজন বলবীর সিংহ।
এক সময় শিবসেনার সক্রিয় কর্মী বলবীর সিংহ এখন হয়ে গেছেন মোহাম্মদ আমির। ভোরে আজান দেন নিয়মিত। শুধু তাই নয়, ঘুরে ঘুরে মসজিদ মেরামত করে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন তিনি।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবরী মসজিদের গম্বুজে শাবলের আঘাত দেয়ার পর সব খুইয়েছিলেন বলবীর। বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। স্ত্রীও সেই সময় তার হাত ধরে বেরিয়ে আসেননি।
বাবার মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরে শুনেছিলেন, বাবা নাকি বলে গিয়েছিলেন- তার দ্বিতীয় সন্তানের (বলবীর) মুখ যেন বাড়ির কেউ আর না দেখেন। এমনকি বলবীরকে যেন তার বাবার মুখাগ্নিও (শেষকৃত্যে আগুন দেয়া) করতেও না দেয়া হয়।
শুধু বলবীর সিংহ নয়, বদলে গিয়ে ছিলেন তার বন্ধু যোগেন্দ্র পালও। বলবীরের সঙ্গেই তিনি ভেঙেছিলেন বাবরী মসজিদ। বহু দিন আগেই যিনি হয়ে গিয়েছেন পুরোদস্তুর মুসলিম।
নিজদের এই বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে বলবীর বলেন, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ, তার পরিবার কোনো দিনই উগ্র হিন্দু ছিল না। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইংরেজি- এই তিন বিষয়ে এমএ ডিগ্রি নেয়া বলবীর পরিবার নিয়ে ছোটবেলায় থাকতেন পানিপথের কাছে ছোট্ট একটা গ্রামে।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা বরাবরই গান্ধীবাদে (মহাত্মা গান্ধী) বিশ্বাসী। তিনি দেশভাগ দেখেছিলেন, তার যন্ত্রণা বুঝেছিলেন। তাই আমাদের আশপাশে যে মুসলিমরা থাকতেন, উনি তাদের আগলে রাখতেন সব সময়।’
কিন্তু পানিপথের পরিবেশটা ছিল অন্য রকম। হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা লোকজনরা তেমন মর্যাদা পেতেন না পানিপথে। ফলে একটা গভীর দুঃখবোধ সব সময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত বলবীরকে।
সেই পানিপথেই একেবারে অচেনা-অজানা আরএসএসের একটি শাখার কর্মীরা বলবীরকে দেখা হলেই ‘আপ, ‘আপ’ (আপনি, আপনি) বলে সম্বোধন করতো।
বলবীর বলেন, ‘সেটাই আমার খুব ভালো লেগেছিল। সেই থেকেই ওদের (আরএসএস) সঙ্গে আমার ওঠাবসা শুরু হয়। শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে করি। প্রতিবেশীরা ভাবতেন আমি কট্টর হিন্দু।’
‘কিন্তু বাবা কোনো দিনই মূর্তি পূজায় বিশ্বাস করতেন না। আমরা কোনো দিনই যেতাম না মন্দিরে। বাড়িতে একটা গীতা ছিল ঠিকই, কিন্তু আমি বা আমার ভাইয়েরা কেউই সেটা কখনো পড়িনি’ যোগ করেন তিনি।
শিবসেনাই বলবীরকে অযোধ্যায় পাঠিয়েছিল বাবরী ভাঙতে। পাঠিয়েছিল বলবীরের বন্ধু যোগেন্দ্র পালকেও। তারা হয়ে যান করসেবক।
তিনি জানান, বাবরী ভেঙে পানিপথে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে তাকে ও যোগেন্দ্রকে তুমুল সংবর্ধনা জানানো হয়। বাবরী মসজিদ ভেঙে তারা যে দু’টি ইট এনেছিলেন, সেগুলো পানিপথে শিবসেনার স্থানীয় অফিসে সাজিয়ে রাখা হয়।
কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই বাধা দেন বলবীরের বাবা দৌলতরাম। তিনি বলেন, ‘বাবা আমাকে বললেন- হয় তুমি এই বাড়িতে থাকবে, না হলে আমি। তো আমিই বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে। আমার স্ত্রীও বেরিয়ে এলো না, থেকে গেল বাড়িতেই।’
ওই সময় ভবঘুরের মতো জীবন কাটিয়েছেন বলবীর। জানিয়েছেন, লম্বা দাড়িওয়ালা লোক দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠতেন তখন। বেশ কিছু দিন পর বাড়িতে ফিরে জানতে পারেন, বাবা মারা গেছেন। ছেলে বাবরী মসজিদ ভাঙায় যে দুঃখ পেয়েছিলেন, তাতেই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে।
এরপর পুরনো বন্ধু যোগেন্দ্রের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে আরও মুষড়ে পড়েন বলবীর। জানতে পারেন, যোগেন্দ্র মুসলিম হয়ে গেছেন। যোগেন্দ্র নাকি তখন বলবীরকে বলেছিলেন, বাবরী ভাঙার পর থেকেই তার মাথা বিগড়ে গিয়েছিল। যোগেন্দ্রের মনে হয়েছিল, পাপ করেছিলেন বলেই সেটা হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে তাই মুসলিম হয়ে যান।
এর পরেই আর দেরি না করে সোনেপতে গিয়ে মাওলানা কালিম সিদ্দিকির কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন বলবীর। হয়ে যান মোহাম্মদ আমির। বদলে যায় জীবন।
‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে অন্তত একশ মসজিদ মেরামত করতে চান জানিয়ে আমির বলেন, ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সাল নাগাদ ২৪ বছরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে মেওয়াটে বেশ কিছু ভেঙে পড়া মসজিদ মেরামত করেছেন।
তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের কাছে মেন্ডুর মসজিদও তিনি মেরামত করেছেন। আর এই কাজে মুসলিমরাই তাকে এগিয়ে এসে সাহায্য করেছেন।
উল্লেখ্য, কয়েক লাখ উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদী ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর গুড়িয়ে দেয় বাবরী মসজিদ। এরপর গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দাঙ্গা। এতে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
হিন্দুদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন, যে জায়গায় মোগল সম্রাটরা বাবরী মসজিদ বানিয়েছিলেন, সেটাই হিন্দুদের আরাধ্য ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান। সেই মন্দির ভেঙেই মসজিদ তৈরি হয়েছিল। যদিও প্রত্নতত্ত্ববিদরা এরকম কোনো প্রমাণ পাননি।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরী মসজিকে ঘিরে এখনো চলছে বিতর্ক। ২০১৭ সালের মার্চে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেয়।
তবে সম্প্রতি ক্ষমতায় আসা উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি জোট মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। মুসলিম নেতারা এই ঘোষণাকে উস্কানিমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৭ দাবিতে কুবি’র তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা
ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি: কাদের
অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে কৃষকের জনজীবন
তীব্র গরমের মধ্যেই শিলাবৃষ্টির আভাস
পঞ্চগড়ে বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ আদায়
বোরহানউদ্দিনে পুলিশের পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশেই থাকবে : শিল্পমন্ত্রী