ছেলে হারানোর ব্যাথা নিয়ে কী করে ভাল থাকবো: মা

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারী, ২০১৮ ১১:০৯:৩৬

ছেলে হারানোর ব্যাথা নিয়ে কী করে ভাল থাকবো: মা

বেগম মমতাজ হোসেন গত বৃহস্পতিবার চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। একমাত্র ছেলে চিত্রশিল্পী ও নির্মাতা খালেদ মাহমুদ মিঠুকে অকালে হারিয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন শোকগ্রস্ত। জীবনের শেষ দিনগুলো ছেলের স্মৃতি হাতড়েই কাটিয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছিলেন, ছেলের সঙ্গে তাঁর অভিমানের কথা, ছেলে চলে যাওয়ার কথা, ফিরে আসার গল্প আর সেই দুর্ঘটনার কথা। ২০১৬ সালে ১১ আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছিল লেখাটি। পাঠকদের জন্য আজ তা আবারও দেওয়া হলো।

দোতলা বাড়িটার প্রধান ফটক দিয়ে বসার ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে দেয়ালে সাজানো ছবি আর বাঁধাই করা সম্মাননাগুলোর দিকে। বেগম মমতাজ হোসেনের অর্জন বোঝানোর জন্য দেয়ালটাকে খুব ক্ষুদ্রই মনে হয়। কারণ, তাঁর সৃষ্টি ও কর্ম যে আলো ছড়িয়েছে সবখানে, তা কয়েকটা সনদ আর সেরা মুহূর্তের ছবির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা কঠিন।

তাঁর মাত্র একটি সৃষ্টির নাম বললেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়বেন অনেকে। বেগম মমতাজ হোসেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের বহুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল সন্ধ্যা’র রচয়িতা। বার্ধক্যে উপনীত তিনি, তবে তাঁর লেখনীর ধার এখনো আগের মতোই আছে।

এখনো দিনের একটা সময় নিয়ম করে কাগজ-কলম নিয়ে বসেন তিনি, লেখেন এ সময়, অতীত কিংবা প্রত্যাশার কথা। তবে তাঁর একটা গল্প আছে, যা লিখতে পারছেন না তিনি। বলতে গেলেও চোখ ভিজে আসে তাঁর। সেই গল্পটা এক সন্তান হারানো মায়ের। যে সন্তানকে মা বহু বছর পর ফিরে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেলেছেন চিরতরে। ভেজা চোখ নিয়েই তিনি আমাদের শোনালেন সেই গল্প।

বেগম মমতাজ হোসেনের এক ছেলে। মায়ের অমতে বিয়ে করে বাড়ি ছাড়েন। ধারণা ছিল হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাঙবে মায়ের অভিমান। সময় গড়ায়, কিন্তু মা-ছেলের অভিমান ভাঙে না।

বেগম মমতাজ হোসেনের ভাই আলমগীর কবির বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক শক্তিশালী নাম। তাঁর ছেলেও মামার পথের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু পরিবার থেকে দূরে দূরে থেকে তিনি চলেছেন শিল্পী ও সংস্কৃতিচর্চার সেই পথে। একসময় কারও কোনো সাহায্য ছাড়া অর্জনও করেছিলেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। কিন্তু এরপরও অপূর্ণতা পূরণ হচ্ছিল না। কারণ মা যে অভিমান করে আছেন।

বেগম মমতাজ হোসেন অনেক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর গত বছরের (২০১৫) শেষ দিকে হঠাৎ করেই একদিন বেগম মমতাজের কাছে একটা ফোন আসে। বেগম মমতাজ এত বছর পর কেন জানি ওই এক ফোনেই সব অভিমান ভুলে যান। দেখা হয় মা-ছেলের। সম্পর্কগুলো জোড়া লাগতে শুরু করে ধীরে ধীরে। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে মমতাজ বেগম ফিরে পান তাঁর ছেলের বউ, নাতি ও নাতনিকে।

কিন্তু এর মাস তিনেক পর, ২০১৬ সালের ৭ মার্চ দুপুরে একটা কৃষ্ণচূড়াগাছ বেগম মমতাজের হারিয়ে পাওয়া গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁর ছেলে খালিদ মাহমুদ মিঠু সেদিন একটি কৃষ্ণচূড়াগাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান।

ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই মা বেগম মমতাজ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। মাস খানেক আগে তাঁর কিছু স্মৃতি বিস্মৃতিও হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান বেশ কয়েক বছর পেছনে। যখন মিঠু ছোট ছিলেন। আবার একটু পরপরই বর্তমানেও ফিরে আসতেন। মনে করতেন ছেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার শেষ সময়টা। অনেক বছর পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মুহূর্তগুলোর স্মৃতি হাতড়ে উঠতেন হঠাৎ হঠাৎ।

আমাদের বললেন, ‘এই তো সেদিন এসেছিল ও (মিঠু)।’ সোফার পাশের খালি জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এখানেই বসেছিল।’ ভেজা চোখের হঠাৎ জ্বলে ওঠা দেখে বোঝা গেল, মায়ের চোখে তাঁর ছেলেটা এখনো সেখানেই আছেন। কোত্থাও যাননি। ছেলে যেন পাশেই বসে আছেন, সেই ভঙ্গিতে বললেন, ‘জানো, ওর ছেলেটারও (আর্য শ্রেষ্ঠ) না ছবি বানানোর ঝোঁক অনেক। বাবার মতোই হবে একদিন। তবে আমি এ কমাস যতটুকু বুঝলাম, মেয়েটা (শিরোপা পূর্ণা) সবচেয়ে বেশি মেধাবী। অনেক তেজদীপ্ত সে। ওদের বাবা যেমন আমাদের কারও কোনো সাহায্য ছাড়াই সবকিছু অর্জন করেছে, দেখো ওরাও এমনটাই হবে।’

বিদায় নেওয়ার সময় যখন তাঁকে বলা হলো, ‘ভালো থাকবেন।’ তখন আবারও মায়ের কষ্ট যেন উছলে ওঠে, ‘একটা ছেলে হারানো মা কী করে ভালো থাকবে, বলো?’

প্রজন্মনিউজ২৪.কম/এ এ মাসুদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ