প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১২:৩৩:০১
আমি একজন শিক্ষকের ছেলে। দাদাও বিখ্যাত শিক্ষক ছিলেন। সম্মানের কমতি ছিল না। জানাজায় বিশাল মাঠ ভরে গিয়েছিল লোকে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ভেতরে তাঁরা জানাজা পড়েছেন। অচেনা অসংখ্য মানুষের চোখে অশ্রু দেখেছি। কিন্তু ওই সম্মানটুকুই সার। সারা জীবন একধরনের অভাব-অনটনের মধ্যেই আমাদের কেটেছে। তাই একজন আদর্শ শিক্ষকের ছেলে বলে যে গর্ব অনুভব করি, মাঝেমধ্যে খেদও হয়।
ভাবি, বাপ যদি আমলা-টামলা হতেন, নিদেনপক্ষে পুলিশ কর্মকর্তা––তাও বোধ হয় শৈশবে একটা বাইসাইকেল চাওয়ার অপরাধে মার খেতে হতো না। যে ধরনের টানাপড়েনের ভেতরে আমরা কথিত আদর্শ শিক্ষকের সন্তানরা বেড়ে উঠেছি কিংবা উঠি––সেই বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যাঁরা না গেছেন বা না যাঁন, তা তাঁদের অনুধাবন করা কঠিন।
আমার এক বান্ধবীর বাবা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেছেন বছরতিনেক হলো। তারপর অবসর-ভাতা ও কল্যাণ তহবিলের টাকা পাওয়ার জন্য নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে (ব্যানবেইস) আবেদন করেছেন। কিন্তু আজ অবধি একটি টাকাও পাননি। অসুস্থ মানুষ। চেনা পরিচিতির মধ্যে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান কেউ নেই। ফলে তদবিরও করতে পারেন না। মৃত্যুর পরে ওই টাকা পেলে তা হয়তো চিতার আগুনের সঙ্গেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে…।
অন্য কোনো পেশার লোকদের অবসর-ভাতার টাকা পেতে এমন বছরের পর বছর ঘুরতে হয় কি না, জানি না। বোধ হয় তাঁরা জাতিকে শিক্ষিত করেছেন, এটাই তাঁদের অপরাধ। তার চেয়ে বরং ঘুষখোর আমলা, দুর্নীতিবাজ পুলিশ, লুটেরা ব্যাংকার হলে অবসরের সঙ্গে সঙ্গেই মোটা অঙ্কের চেক পেয়ে যেতেন। আবার অবসরের আগে চাকরিকালীন যে উপরি কামিয়েছেন, তা তো থাকছেই।
অন্যদিকে যে মাস্টার মশাই দুটি জামা বদল করে করে মাস পার করেছেন, নৈতিকতা আর দেশপ্রেমের কথা শিখিয়েছেন তাঁর ছাত্রছাত্রীকে, সেই ছাত্রছাত্রীরা একদিন সাঁই করে দামি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছিটিয়ে মাস্টার মশাইয়ের সাদা পাঞ্জাবিটা নষ্ট করে দিয়ে গেছেন। সারা জীবন সুপথে চলার সবক দিয়ে সেই শিক্ষক হয়তো একদিন নীলক্ষেতের নীল রঙের ওই ভবনের বারান্দায় ছুটে ছুটে ক্লান্ত হয়ে বুকের তীব্র ব্যথাটা অনুভব করে কাউকে কিছু বলতে না পেরেই গভীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়েন। তারপর আমরা তাঁর স্মরণসভায় একজন আদর্শ স্কুলমাস্টারের জীবনী পাঠ করি এবং অশ্রুপাত করি।
আমাদের বাজেটের আকার বাড়তে বাড়তে লাখ কোটি ছাড়ায়; আমাদের পদ্মা সেতুর বাজেট বাড়তে বাড়তে হয়তো ৪০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে; আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দফায় দফায় বাড়তে থাকবে; তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রশ্নে আমাদের বাজেটে কখনো টান পড়বে না।
কিন্তু আমাদের শিক্ষিত করে তোলেন রাষ্ট্রের যেই জনগোষ্ঠী, যাঁদের আমরা বলি সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত অংশ, সেই শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য দূর করতে, সেই শিক্ষকদের সংসার চালানোর মতো ন্যূনতম পয়সার দাবিতে মফস্বল ছেড়ে ঢাকায় এসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কিংবা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন করতে হয়। এবং আমাদের সদয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বলেন, সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দিলে তাঁদের কিছুই করার নেই।
আসলেই কিছু করার নেই। আমরা শিক্ষকদের দেখলে দাঁড়িয়ে সালাম দেবো, মৃত্যুর পরে তাঁর স্মরণসভায় তিনি কতটা আদর্শবান লোক ছিলেন, সেই কথা বলে অশ্রুপাত করব। কিন্তু একটা জাতিকে শিক্ষিত করার বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁর বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম পয়সাটুকু দিচ্ছে কি না, সেই খবর রাখব না। আমরা বলব, ‘আমাদের কিছুই করার নেই।’
প্রজন্মনিউজ২৪.কম/এ এ মাসুদ
খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিল : শেখ হাসিনা
রাজবাড়ীতে ঘুড়ি উৎসব ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত
কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মাদরাসাছাত্র নিহত
মাদক ব্যবসার মূল হোতা সোর্স শহীদ ধরা ছোঁয়ার বাইরে
খুবিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
সেই জাহাজে করে দেশে ফিরতে চায় না ২ নাবিক
পহেলা বৈশাখের নির্দেশনা উপেক্ষা উদীচীর: যা বলছে ডিএমপি
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once