৬৯% পোশাক কারখানায় নেই আগুন শনাক্তের ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ১০:৩০:১৪

৬৯% পোশাক কারখানায় নেই আগুন শনাক্তের ব্যবস্থা

 ৯৪৬টি কারখানায় আগুন চিহ্নিত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই বলে প্রতিবেদন দিয়েছে দেশের পোশাক কারখানার সংস্কার তদারকির দায়িত্বে থাকা ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড। আগুন লাগলে সতর্ক করার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ফায়ার অ্যালার্মের ব্যবস্থাও নেই এসব কারখানায়। অ্যাকর্ড পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৩৭৮টি কারখানায় এ ধরণের সমস্যা পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৩২টি বা ৩১ শতাংশ কারখানা আগুন চিহ্নিত করা ও ফায়ার অ্যালার্মের যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি প্রায় ৬৯ শতাংশ কারখানায় এখনো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই।

 বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার কারখানার সংস্কার কার্যক্রম তদারক করছে অ্যাকর্ড। প্রায় সোয়া চার বছরের কার্যক্রম শেষে গতকাল শুক্রবার অগ্রগতির ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। অবশ্য অ্যাকর্ডের এমন পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নন মালিকপক্ষ।

 বিজিএমইএ’র একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার  অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বাস্তবতা হলো অ্যাকর্ডভুক্ত ৯০ শতাংশ কারখানায় আগুন চিহ্নিত করার এই যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। হয়তো সবাই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেনি। ফলে অ্যাকর্ডের সনদও পায়নি। তিনি বলেন, একটি কারখানা আগুন চিহ্নিত করার এ ব্যবস্থা ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন করার পরও শতভাগ হয়নি বলা যায়। সেই বিবেচনায় অ্যাকর্ড হয়তো ৯৪৬টি কারখানার এ পরিসংখ্যান দিয়েছে। তবে আগামী মে নাগাদ অ্যাকর্ডের সময়সীমার মধ্যে পুরো ব্যবস্থাটি ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

 আগুন চিহ্নিত করার এ ব্যবস্থা মূলত ‘সেন্ট্রাল ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম’ নামে পরিচিত। কোন ভবনের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (কন্ট্রোল রুম) স্থাপিত ডিজিটাল বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ফ্লোর সংযুক্ত থাকবে।  কোথাও আগুন লাগলে কিংবা ধোঁয়া দেখা গেলে ডিজিটাল বোর্ড ওই স্থানটি দেখাবে। ফলে কোথায় আগুন লেগেছে, তা চিহ্নিত করা সহজ হবে। এছাড়া কারখানায় স্থাপন করা ফায়ার ডোরের সঙ্গেও এ ব্যবস্থা যুক্ত থাকবে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সব ফায়ার ডোর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ভেতর থেকে এ দরজা খোলা যাবে, বাইরে থেকে নয়। ফলে শ্রমিকরা ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। কিন্তু ফায়ার ডোরের কারণে নির্দিষ্ট জায়গার আগুন বা ধোঁয়া ফায়ার ডোর ভেদ করে বাইরে আসতে পারবে না।

অ্যাকর্ডের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, আগুন লাগলে শ্রমিকদের দ্রুত বেরিয়ে আসার ব্যবস্থায় চমত্কার অগ্রগতি হয়েছে। অর্থাত্ এক হাজার ৩৯৩টি কারখানার মধ্যে ৯৪ শতাংশ কারখানাই কলাপসিবল গেট সরিয়ে নিয়েছে। ৭২টি কারখানা এক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনা কবলিত কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত আলো থাকার বিষয়েও অগ্রগতি রয়েছে।

 তাজরীন ফ্যাশন্সে অগ্নি দুর্ঘটনা ও রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের মে মাসে অ্যাকর্ড গঠিত হয়। এতে যুক্ত রয়েছে প্রায় ১৩০ টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংগঠন। ৫ বছরের জন্য এ জোট বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চুক্তিবদ্ধ। সেই হিসেবে আগামী মে মাসে বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় দেড় হাজার কারখানায় যে সব ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশ সংস্কারকাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ১২০টি কারখানা সব ধরণের সংস্কার সম্পন্ন করে অ্যাকর্ডের সনদও পেয়েছে।

এদিকে আগামী বছরের মে নাগাদ অ্যাকর্ডের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তাদের আরো তিন বছর থাকা নিয়ে চলমান বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। বরং অ্যাকর্ডের বিবৃতিতে আলোচ্য সময়ের পরও কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। যদিও সমপ্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের পর অ্যাকর্ড আর থাকছে না।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন