ছাত্ররাজনীতির বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:৪৪:১৭

ছাত্ররাজনীতির বেহাল দশা

ছাত্ররাজনীতির নামে সংঘবদ্ধ অপরাধে যুক্ত হচ্ছেন কিছু তরুণ, তাঁদের কারণে পুরো ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কিত হচ্ছে বলে মন্তব্য এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। পুরান ঢাকার আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ছাত্রনেতাদের ছাত্রাবাসের প্রশাসন চালানো, জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে নিয়ে যাওয়ার মতো প্রবণতারও সমালোচনা করা হয়েছে। তথাকথিত কিছু রাজনীতিবিদ নিজেদের স্বার্থে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলেও রায়ে বলা হয়েছে।

রায়ে আদালত আরও বলেছেন, টাকাওয়ালা এবং ক্ষমতাশালী লোকেরা একধরনের দায়মুক্তি ভোগ করেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশ এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা, চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করে অপরাধীদের সহায়তা করেন।

বিশ্বজিৎ দাস কাজ করতেন দরজির দোকানে, কোনো রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার সংগ্রামটুকুই করছিলেন তিনি। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে কাজে যাওয়ার সময় বাহাদুর শাহ পার্কসংলগ্ন এলাকায় হতভাগ্য এই তরুণকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের একদল কর্মী। রক্তাক্ত শরীরের বিশ্বজিৎকে উপর্যুপরি মারধর ও কোপানোর ছবি দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়। শুরু থেকেই বিশ্বজিৎ হত্যা নিয়ে গণমাধ্যম যতখানি সরব ছিল, ততখানি তৎপর ছিল না পুলিশ। বিশ্বজিৎ হত্যার তদন্তের নানা অসংগতিও গণমাধ্যমে উঠে আসে। শেষ পর্যন্ত বিচারিক আদালতের রায়ে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এরপর মামলা হাইকোর্টে আসে। গত ৬ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আটজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন, চারজনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন ও দুজনকে খালাস দেন। যদিও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ওই দুজন এখনো পলাতক। ৮০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

কলুষিত ছাত্ররাজনীতি

ছাত্ররাজনীতির অপচর্চা, হানাহানি নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়।প্রথম আলোর হিসাবে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে গত ৮ বছর ১০ মাসে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন। টেন্ডার, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে দেশের অন্তত ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে বন্ধ ছিল।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি ঐতিহ্যবিচ্যুত হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন শক্তি কাজ করে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হতে হবে। তাঁর মতে, ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। তবে সেটা প্রথাগতভাবেই থাকতে হবে, তা নয়। সঠিক নেতৃত্বকে কীভাবে সামনে আনা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, ‘দেশের গৌরবোজ্জ্বল ছাত্ররাজনীতির দীর্ঘ সংগ্রামের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস কিছু তরুণের জন্য কলঙ্কিত হচ্ছে। যাঁরা ছাত্ররাজনীতির নামে প্রকৃতপক্ষে সংঘবদ্ধ অপরাধে সম্পৃক্ত। এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য কখনো কখনো তাঁদের ক্ষমতা-শক্তির প্রকাশ্য ও নির্মম প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়ে। কিছু তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা নিজেদের স্বার্থে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাও করেন। সংবাদপত্রে এ-ও দেখেছি যে পাবলিক পরীক্ষায় নকল করতে না দেওয়ায় শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। অনেক ছাত্রাবাসে তাঁরা প্রশাসন নিজের হাতে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট ভাড়া দেন। বিশাল কর্মী বাহিনী দেখিয়ে প্রশংসা ও বাড়তি কৃতিত্ব পেতে তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সভা ও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বাধ্য করেন। এটি উদ্বেগ ও হতাশাজনক পরিস্থিতি। জাতি এ থেকে পরিত্রাণ চায়। এটি আশা করা যায় যে সরকার ও বিরোধী পক্ষের দায়িত্বশীল জাতীয় নেতারা এই সমস্যার সমাধানে ছাত্ররাজনীতি ও আন্দোলন বিষয়ে নীতি গ্রহণ করবেন। তাঁরা অবশ্যই তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের আইন নিজের হাতে নিয়ে প্রতিপক্ষের কর্মীদের প্রতিরোধে উৎসাহ দেবেন না, এমনকি পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ এবং বিশৃঙ্খল হলেও। কেননা এসব সংঘাতপূর্ণ ও বেআইনি কর্মকাণ্ড দেখার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে।

ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৮৯-এ সুলতান-মুশতাক পরিষদ) মুহাম্মদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম বাধাহীন হতে হবে। ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন দিতে হবে। তাহলেই সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থাকবে। তিনি বলেন, এখন ছাত্রনেতারা আরাম-আয়েশের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন। নির্বাচন হলে সেই ছাত্রনেতারাই সাধারণ ছাত্রদের মন জয়ের প্রতিযোগিতায় নামবেন। একটা সুস্থ পরিবেশ থাকবে। ছাত্ররাও কোথাও অন্যায়ের শিকার হলে প্রতিকারের জায়গা খুঁজে পাবেন।

ডাকসুর আরেক সাবেক জিএস ও ছাত্রদল নেতা খায়রুল কবির বলেন, ইতিবাচক রাজনীতি না থাকায় ছাত্ররাজনীতিতে কেবল লেজুড়বৃত্তিটুকুই রয়ে গেছে। তিনি বলেন, সেই ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত এ দেশ গড়তে ছাত্রদের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখন ছাত্রনেতাদের কাজে দেশের মানুষ তাঁদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়েছে। এ জন্য জাতীয় নেতাদের ঐকমত্যে আসতে হবে।

সাবেক ওই ছাত্রনেতা বলেন, এখন অন্য দলের ছেলেরা হলে থাকতে পারে না। সমস্ত অপকর্মে সরকারি ছাত্রসংগঠনের ছেলেরা যুক্ত হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতিতে আসলেই পচন ধরেছে; যার কারণে বারবার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, ভর্তি-বাণিজ্যসহ নানা রকম বাণিজ্য হচ্ছে।

কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে কেটে পড়েন নেতারা

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘তরুণ অনুসারীদের উদ্দেশে রাজনৈতিক নেতাদের এমন আগুন ধরানো বক্তব্য দিতে দেখি, যেখানে ধ্বংসাত্মকভাবে হলেও প্রতিরোধ করার কথা বলা হয়। অভিযুক্ত শাকিল ও ইমদাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেখা যায় যে ঘটনার আগের দিন তাঁদের নেতারা যেকোনো মূল্যে প্রতিপক্ষের কর্মীদের প্রতিরোধ করতে নির্দেশনা ও প্ররোচনা দিয়েছিলেন। সেই কথিত নেতারাই সেদিনের (হত্যাকাণ্ডের দিন) অবরোধবিরোধী কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন। ঘটনার পর তাঁরা অনুসারীদের মৃত্যুর মুখে ফেলে দৃশ্যপটের বাইরে চলে যান।’

শাকিল ও রাজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ‘এই হতভাগ্য তরুণ বিশ্বজিৎ অবরোধের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো রাজনৈতিক দলেই ছিলেন না। হামলার সময় তিনি ছিলেন পুরোপুরি অরক্ষিত ও অনিরাপদ। এমনকি অভিযুক্তদের কাছে দয়াভিক্ষা চেয়েছিলেন, কিন্তু অভিযুক্তরা তা শোনেনি। এটি প্রকাশ্য দিবালোকে বর্বর হত্যাকাণ্ড, যা জনসাধারণের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। অপরাধের মূল দায় শাকিল ও রাজনের, যারা প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে বিশ্বজিতের ওপর আঘাত করেছিল। তরুণ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তাদের পরিচয় এই অপরাধের গুরুত্ব কমায় না। তাই আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিষয়টি নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার যুক্তি খুঁজে পাই না।’

যে কারণে সাজা কমল

কয়েকজনের সাজা কমানোর বিষয়ে রায়ে বলা হয়, অভিযুক্ত নাহিদ, শাওন, ইমদাদ এবং লিমন বিশ্বজিতের ওপর প্রাণঘাতী কোনো আঘাত করেননি। কিন্তু তাঁদের সেখানে অবস্থান ও ঘটনায় অংশগ্রহণ অভিন্ন উদ্দেশ্য প্রমাণ করে। যদিও এই চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অতীত অপরাধের ইতিহাস নেই। তাঁরা সবাই তরুণ এবং তাঁদের মধ্যে নাহিদ, শাওন এবং ইমদাদ প্রায় পাঁচ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছেন। তাঁরা স্বভাবগত অপরাধী নন এবং ছাড়া পেলে তাঁদের অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম।’ এ ক্ষেত্রে নালু বনাম রাষ্ট্র মামলার উদাহরণ তুলে ধরা হয়।

আদালত বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি না যে, এই অভিযুক্তদের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় না নিয়ে পাইকারি হারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে আমরা আসামিপক্ষের এই যুক্তিও নিচ্ছি না যে দণ্ডবিধির ৩৪ ও ৩০২ ধারায় তাদের অপরাধ প্রমাণ হয় না। ঘটনা, পারিপার্শ্বিকতা এবং তাদের অপরাধের দায় বিবেচনায় নিয়ে আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের পক্ষে মত দিচ্ছি। একই কারণে পলাতক মীর নূর-ই আলম ওরফে লিমনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের পক্ষে মত দিচ্ছি। অভিযুক্ত কিবরিয়াকে ঘটনাস্থলে থাকলেও তার কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। তাই তার দণ্ড বহালের পক্ষে আমাদের মত নেই।’

 

টাকাওয়ালা ও ক্ষমতাশালীদের দায়মুক্তি

রায়ে বলা হয়, ‘আমাদের ফৌজদারি বিচারিক ব্যবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত রোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে টাকাওয়ালা এবং ক্ষমতাশালী লোকেরা একধরনের দায়মুক্তি ভোগ করেন। তাঁরা অপরাধ করেও খুব সহজে তদন্তের ফলাফল প্রভাবিত করতে পারেন। অনেক মামলায় পুলিশ এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা, চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করে অপরাধীদের সহায়তা করেন। তাঁরা রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাব, কখনো অবৈধ অর্থ বা অন্য উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এসব করে থাকেন। এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত আর চলতে দেওয়া যায় না। যেসব সরকারি কর্মচারী এসব দায়বদ্ধতার জায়গায় রয়েছেন, তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারব্যবস্থা যদি অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে না পারে, তাহলে আইনের শাসন হুমকির মুখে পড়বে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তে দুর্বলতা, তদন্তে অর্থপ্রতিপত্তির প্রভাব, ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদনে অসংগতি এবং ছাত্ররাজনীতি কলুষিত হওয়ার বিষয়গুলো কারও অজানা নয়। যদিও রায়ে এসব বিষয় সচরাচর আসে না। তবে এবার আসাতে আমি অবাক হইনি।’ তাঁর মতে, এসব বিষয়ের সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু নিকট-ভবিষ্যতে এর কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন

রায়ে বলা হয়, সূত্রাপুর থানার তখনকার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল হক বিশ্বজিতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, ডান হাতের ওপরের অংশে কাটা জখম, কোমরে ফোলা জখম ও বাঁ হাঁটুতে ছোলা রয়েছে। আর ময়নাতদন্তকারী সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মাকসুদ তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বিশ্বজিতের পিঠের ডান পাশে একটি ছুরিকাঘাতের ক্ষত রয়েছে। অথচ ভিডিও ফুটেজ, পেপার ক্লিপিং এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে তাঁর শরীরে কিরিচ, চাপাতি, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। এসব দেখে একজন সাধারণ মানুষও বুঝবেন যে কিরিচ ও চাপাতি দিয়ে আঘাতের কারণে একাধিক ক্ষতচিহ্ন এবং রড ও লাঠির আঘাতে অগণিত ফোলা জখম হওয়ার কথা।

নিহতের বড় ভাই উত্তম কুমার দাস ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে বিশ্বজিৎকে উপুড় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। তিনি বিশ্বজিতের পিঠে দুটি কাটা জখম এবং অগণিত ফোলা জখমের চিহ্ন দেখতে পান। এই ব্যক্তির মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার এবং সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে এ বিষয় নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের কোনো কারণ থাকতে পারে না। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম শাকিল এবং অন্য তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও বিশ্বজিতের ওপর অগণিত আঘাতের উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়, এটি বিস্ময়কর যে কোনো এজাহার বা অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হওয়ার আগেই মৃতদেহটি শেষকৃত্যের জন্য তাঁর (বিশ্বজিৎ) গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে সব ক্ষতচিহ্নসহ দেহটি দাহ করা হয়।

রায়ে আদালত বলেন, এসব সংবাদ ক্লিপিংস পড়ে এই ধারণা জন্মায় যে ঘটনার প্রাথমিক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদাসীন ছিল। যার কারণে হাইকোর্টকে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আদেশ দিতে হয়েছিল। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিষয়ে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদটির উল্লেখও করেন আদালত।

রায়ে আদালত পুলিশের এসআই জাহিদুল ও ফরেনসিক চিকিৎসক মো. মাকসুদ প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো অসদাচরণ করেছেন কি না, তা অনুসন্ধান করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি তদারক করে নিয়মিত আদালতের নজরে আনার জন্য আইনজীবী মনজিল মোরসেদকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। ওই মামলায় বিশ্বজিতের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তা অসদাচরণ করেছেন কি না, তা অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না, তা জানতে লিখিতভাবে আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিব ও আইজিপি বরাবরে চিঠি পাঠানো হবে।’

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ