মৃত্যুকূপে লাখো মানুষের বসবাস

প্রকাশিত: ১৫ জুন, ২০১৭ ০৭:২৮:১১ || পরিবর্তিত: ১৫ জুন, ২০১৭ ০৭:২৮:১১

মৃত্যুকূপে লাখো মানুষের বসবাস

কক্সবাজার শহরের আলির জাহাল সাইফুল কমিউনিটি সেন্টারের পাশে টমটম গ্যারেজের পশ্চিম পাশে বিশাল পাহাড়। সেটি কেটে অবৈধ টিনশেড সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন রামু জোয়ারিয়া নালার এক ব্যক্তি। শুধু বসতবাড়ি নয়, তিনি সেখানে পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করে ভাড়াও দিয়েছেন।

রাস্তার পাশে আমগাছের তলায় টিনশেড; এই অবৈধ স্থাপনার আড়ালে প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে আরও পাহাড়। শুধু এখানে নয়, কলাতলীসহ জেলার আনাচেকানাচে চলছে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণের ধুম। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু ঘরবাডি উচ্ছেদ করলেও তা পুনরায় তৈরি হচ্ছে।

অথচ গত পাঁচ বছরে ২৫টির বেশি পাহাড়ধসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে শহরের ১১টির বেশি সরকারি পাহাড় দখল করে তৈরি করা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনায় বসবাস করছেন এক লাখের বেশি মানুষ।

সম্প্রতি কলাতলী পাহাড ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি এই উঁচু পাহাড কেটে ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে ৩০টির বেশি অস্থায়ী টিনের ঘর। সেখানে বসবাস করছেন ভাসমান লোকজন। একটি ঘরের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম (৪৪) জানান, এক মাস আগে পাহাডের এক খণ্ড জমিতে তিনি টিনের ঘরটি তৈরি করেন।

পাশে আরও দুটি টিনের ঘর; শহরের একজন প্রভাবশালী ঘর তৈরি করে পাহারাদার হিসেবে দুটি পরিবারকে থাকতে দিয়েছেন। এ পাহাড়ের পাশে আদর্শগ্রাম, টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার, লাইট হাউস, সার্কিট হাউস, পাহাড়তলী, লারপাড়া, এবিসি ঘোনাসহ শহরের আরও অন্তত ১০টি পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীরা মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে পাহাড় কাটা চালাচ্ছেন। পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ূথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) ও কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাহাড় কাটা বন্ধ করতে পারছে না।

তাদের মতে, পাহাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না গেলে ভবিষ্যতে শহরে কোনো পাহাড়ের চিহ্ন থাকবে না। তা ছাড়া বর্ষায় পাহাড়ধসে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আলির জাহাল, লারপাড়া ও পাহাড়তলীতে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ৫০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় ও পাদদেশে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন।

পাহাড় কাটার মাটি ঠেলাগাড়িতে করে ফেলা হচ্ছে শহরের বাঁকখালী নদীতে। এতে সামান্য বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, পর্যটন শহরের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় কয়েক লাখ ভাসমান মানুষ ঠাঁই নিয়েছে কক্সবাজার শহরে। তাঁরা পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করছে।

ফলে পাহাড় কাটার মাটি নেমে শহরের নালা ভরাট হচ্ছে। বাঁকখালী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে নৌ-চলাচলের পথ। বর্ষায় পাহাড়ধসের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। তার পরও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর হতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, গত মে মাসেও একাধিক অভিযান চালিয়ে পাঁচটির বেশি ট্রাকসহ পাহাড় কাটার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে-না-যেতেই পুনরায় পাহাড় কাটা চলে। জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

শহরের একাধিক পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরির দায়ে গত কয়েক মাসে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় শতাধিক দখলদারের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা করা হয়েছে। অন্য দখলদারদেরও তালিকা তৈরি হচ্ছে। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও প্রশানের চিহ্নিত কিছু দুর্নীতি বাজের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটায় জড়িতদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

তাদের কারণে অনেক সময় পাহাড়কাটা বন্ধ করা সম্ভব হয় না। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধে প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট। ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরে যেতে বারবার মাইকিং করা হয়। এর পরও অনেক জায়গায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজন সরে না।

প্রশাসন ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। এটি অব্যাহত রয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/কেএম লুৎফর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ